কাবা শরিফ মার্বেল পাথরের অপূর্ব কাহিনি জেনে নিন ।Know the wonderful story of Kaaba Sharif marble stone

 


যাঁরা ওমরাহ বা হজ পালন করেছেন, তাঁরা জানেন, কাবা শরিফের মাতাফ (যেখানে তাওয়াফ করা হয়) খোলা আকাশের নিচে অবস্থিত। প্রচণ্ড রোদে যখন চামড়া পুড়ে যাওয়ার জোগাড়, সে মুহূর্তে তাওয়াফ করার সময় পায়ে কোনো কষ্ট অনুভূত হয় না, বরং পায়ের পাতায় এক অদ্ভুত প্রশান্তি আসে।

হারামাইন (মক্কা-মদিনা) সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় মিশরীয় স্থপতি ড. মোহাম্মাদ কামাল ইসমাইলের ওপর। তিনি চান তাওয়াফকারীদের স্বাচ্ছন্দ্য দিতে মসজিদুল হারামের মেঝে এমন মার্বেল পাথরে ঢেকে দিতে, যা বিশেষ তাপ শোষণ করতে সক্ষম। অনেক গবেষণার পর এ ধরনের মার্বেলের সন্ধান পাওয়া যায় গ্রিসের একটি পাহাড়ে। স্থপতি কামাল ইসমাইল গ্রিসে গিয়ে মার্বেল কেনার চুক্তি করেন এবং সাদা মার্বেলের মজুত নিয়ে বিশেষ নকশায় মসজিদুল হারামের মেঝে তৈরি করেন। এই ঘটনার ১৫ বছর পর সৌদি সরকার কামাল ইসমাইলকে আবার ডেকে মদিনার মসজিদে নববির চারপাশের চত্বরও একইভাবে সাদা মার্বেল দিয়ে ঢেকে দেওয়ার দায়িত্ব দেন।

ড. কামাল দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে আবার গ্রিসে যান। তাঁর জানা ছিল না, সেখানে সেই মার্বেল এখনও আছে কি না। গ্রিসে গিয়ে জানতে পারেন, ১৫ বছর আগে পাহাড়টির বাকি পাথর বিক্রি হয়ে গেছে। বিমর্ষ হয়ে কামাল ইসমাইল কফি পর্যন্ত শেষ করতে পারেননি এবং পরের ফ্লাইটে মক্কায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে ফিরে যাওয়ার আগে বাকি মার্বেল পাথরের ক্রেতার নাম-ঠিকানা জানতে চান। তাঁকে বলা হয়, ১৫ বছর আগের লেনদেনের তথ্য বের করতে কিছু সময় লাগবে।

পরদিন তাঁকে জানানো হয়, ক্রেতার নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। আবার সেই অফিসের দিকে যাত্রা করেন কামাল। ঠিকানা পেয়ে তাঁর হৃদস্পন্দন বাড়ে, কারণ ক্রেতা একটি সৌদি কোম্পানি। তিনি সৌদি আরবে ফিরে গিয়ে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেন এবং জানতে চান, ১৫ বছর আগে কেনা সেই মার্বেল দিয়ে তাঁরা কী করেছেন। প্রথমে পরিচালক কিছুই মনে করতে পারলেন না, তবে পরে জানা গেল, পুরো আমদানিটি পড়ে আছে।

এ তথ্য শুনে কামাল ইসমাইলের চোখে অশ্রু ঝরতে শুরু করে। পরিচালকের কাছে কারণ জানতে চাইলে তিনি পুরো ঘটনা খুলে বলেন। পরে, ড. কামাল কোম্পানিটিকে সৌদি সরকারের পক্ষে একটি চেক দেন, যাতে ইচ্ছেমতো অঙ্ক বসাতে বলেন। কিন্তু কোম্পানির মালিক জানলে যে এই মার্বেল মসজিদে নববির চত্বরে বসানো হবে, তখন তিনি চেক নিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে দিয়ে এটা কিনিয়েছিলেন, আবার তিনিই আমাকে এর কথা ভুলিয়ে দিয়েছেন।’

সেই মার্বেল পাথর রাসুল (সা.)-এর মসজিদের উদ্দেশ্যে এসেছিল এবং সাদা পাথর দিয়ে মসজিদে নববির চত্বরও মুড়ে দেওয়া হয়।

স্থপতি ড. মোহাম্মাদ কামাল ইসমাইল (১৯০৮-২০০৮) ইসলামি স্থাপত্যে তিনটি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। শতবর্ষী এই স্থপতি তাঁর কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় মক্কা ও মদিনার দুই মসজিদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন, কিন্তু এর জন্য কোনো পারিশ্রমিক নেননি। সৌদি বাদশাহ ফাহাদ এবং বিন লাদেন গ্রুপের সুপারিশও কাজে আসেনি, তিনি তাঁদের মোটা অঙ্কের চেক ফিরিয়ে দেন। তাঁর প্রশ্ন ছিল, ‘এ দুই পবিত্র মসজিদের কাজের জন্য পারিশ্রমিক নিয়ে শেষ বিচারের দিনে আমি কীভাবে আল্লাহর সামনে দাঁড়াব?’

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url