শুক্রবারে জুমার গুরুত্ব । Importance of Jumma on Friday

 

জুমার নামাজ ও তার গুরুত্ব

জুমার নামাজ সেই মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রতি শুক্রবার জুমার জামাত হয়। 'জুমা' শব্দটি 'জমা' থেকে এসেছে, যার অর্থ একত্র হওয়া।

কোরআনের নির্দেশনা:
কোরআনে সুরা জুমা রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে: “হে বিশ্বাসীগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয়, তখন আল্লাহকে মনে রেখে দ্রুত আসো এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য ভালো, যদি তোমরা বোঝো। নামাজ শেষ হলে তোমরা ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো” (সুরা জুমা, আয়াত ৯-১০)।

জুমারের তাৎপর্য:
তাফসিরবিদেরা জানান, সুরা জুমার আগের সুরার নাম ‘সুরা সফ’, যার অর্থ সারি বা কাতার। জুমার নামাজ সারিবদ্ধভাবে আদায় করা হয়, যা ঐক্য ও শৃঙ্খলার প্রতীক। পরবর্তী সুরা মুনাফিকুনে উল্লেখ রয়েছে যে জুমার নামাজ না পড়া কপটতার লক্ষণ। জুমার নামাজের প্রথম রাকাতে সুরা জুমা এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা মুনাফিকুন পড়া সুন্নত।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, “যে ব্যক্তি বিনা কারণে জুমা পরিত্যাগ করে, সে মুনাফিক হিসেবে গণ্য হবে” (মিশকাত)।

হজরত উমর (রা.) ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, যারা ধারাবাহিকভাবে জুমা পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তাদের অন্তরে সিলমোহর করবেন (মুসলিম)।

নীরবতা ও আচরণ:
জুমার জামাতে নীরব থাকার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। হজরত মুআজ ইবনে আনাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার জামাতে মানুষের ওপর দিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করবে, কিয়ামতের দিন তাকে জাহান্নামের পুল বানানো হবে” (তিরমিজি)।

জুমার গুরুত্ব:
হজরত তারেক ইবনে শিহাব (রা.) বলেছেন, “জুমার জামাতে অংশগ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলমানের ফরজ কর্তব্য, কেবল চার শ্রেণির লোক ছাড়া: ক্রীতদাস, নারী, শিশু ও অসুস্থ” (আবু দাউদ)।

হজরত সালমান (রা.) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, সুগন্ধি ব্যবহার করে এবং মসজিদে গিয়ে খুতবা শোনে, আল্লাহ তার দুই জুমার মধ্যবর্তী গুনাহ মাফ করে দেবেন” (বুখারি)।

জুমার খুতবা:
জুমার খুতবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হজরত জাবির ইবনে সামুরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) দুটি খুতবা দিতেন এবং দুই খুতবার মাঝে বসতেন (মুসলিম)।

একবার, নবীজি (সা.) খুতবা দিচ্ছিলেন, এমন সময়ে একটি ব্যবসায়িক কাফেলা এলে অনেকে উঠে চলে যায়। তখন সুরা জুমার শেষ আয়াত নাজিল হয়, যা ব্যবসার চেয়ে আল্লাহর কাছে যা আছে তা অনেক ভালো বলে উল্লেখ করে (সুরা জুমা, আয়াত ১১)।

নামাজের প্রণালী:
জুমার নামাজ মূলত দুই রাকাত। জোহরের সময় এই নামাজ ফরজ, এবং এর আগে ও পরে সুন্নত রাকাত রয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবীজি জুমার আগে চার রাকাত ও পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন (তাবরানি)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, “জুমার নামাজ শেষে চার রাকাত পড়া উত্তম” (মুসলিম)।

উপসংহার

জুমার নামাজ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা মুসলমানদের জন্য ঐক্য, শৃঙ্খলা ও আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গভীর করার সুযোগ করে। এটি শুধু ফরজ নয়, বরং আল্লাহর রহমত ও গুনাহ মাফের সুযোগও এনে দেয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url