আগাম জাতের শিম চাষ- বিঘা প্রতি ২ লক্ষ টাকা লাভ পাচ্ছে কৃষক | আগাম শিম চাষ পদ্ধতি । Early bean cultivation method
আগাম জাতের শিম চাষ একটি লাভজনক কৃষি উদ্যোগ হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, যেখানে কৃষকরা বিঘা প্রতি ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাভ করতে পারেন। আগাম শিম চাষের জন্য সঠিক পদ্ধতি ও পরিচর্যা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলুন দেখি কিভাবে শিম চাষ করতে হয়:
আগাম শিম চাষের উপযুক্ত পদ্ধতি:
১. মাটির প্রস্তুতি:
- শিম চাষের জন্য দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী।
- মাটি ভালভাবে চাষ করতে হবে এবং জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- মাটির পিএইচ মান ৬.৫ - ৭.৫ এর মধ্যে হলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
- জমি চাষের সময় ১০-১৫ টন পঁচা গোবর বা কম্পোস্ট সার জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
২. উন্নত জাত নির্বাচন:
- আগাম শিম চাষের জন্য উন্নত জাত নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। কিছু আগাম জাতের শিম হলো:
- ব্রহ্মশঙ্কর
- বারি শিম-১
- বারি শিম-২
- আনন্দা
- রাজশাহী লম্বা শিম
৩. বীজ বপন:
- আগাম শিম চাষের জন্য অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যবর্তী সময়ে বীজ বপন করতে হবে।
- ১ মিটার দূরত্বে সারি তৈরি করতে হবে এবং প্রতিটি গর্তে ২-৩টি করে বীজ বপন করতে হবে। বীজের গভীরতা হবে প্রায় ২-৩ সেন্টিমিটার।
৪. সার প্রয়োগ:
- চারা গজানোর পরে ১৫-২০ দিন পর প্রতি বিঘায় ২০০-২৫০ কেজি ইউরিয়া, ১৫০ কেজি টিএসপি এবং ১০০-১২০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
- গাছে ফুল আসার সময় আরো একবার ইউরিয়া এবং এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
৫. পরিচর্যা:
- শিম গাছ খুবই লতানো, তাই গাছের জন্য মাচা তৈরি করতে হবে যাতে গাছ ভালভাবে বৃদ্ধি পায়।
- নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার এবং মাটি খোঁচা দিয়ে হালকা করে জল দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
- পর্যাপ্ত রোদ এবং সেচ নিশ্চিত করতে হবে। চারা গজানোর পর নিয়মিত সেচ দিতে হবে, বিশেষ করে ফুল আসার সময় বেশি যত্ন নিতে হবে।
৬. পোকামাকড় এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ:
- শিম গাছের রোগগুলোর মধ্যে পাউডারি মিলডিউ, লিফ ব্লাইট, এবং পাতা পোড়া প্রধান। এসব রোগের জন্য প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে।
- পোকার আক্রমণ রোধ করতে জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন নিম তেল বা অন্য প্রাকৃতিক কীটনাশক।
৭. ফসল তোলা:
- আগাম জাতের শিম প্রায় ৫০-৬০ দিনের মধ্যে ফসল দেওয়া শুরু করে। এই সময়ে শিম তুলতে হবে যখন শিমগুলো পূর্ণ আকার ধারণ করবে কিন্তু বীজ সম্পূর্ণ পরিপক্ব হবে না।
- নিয়মিত শিম তোলা হলে ফলনও বাড়বে এবং ফসলের গুণগত মান ভালো থাকবে।
লাভজনকতা:
- সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে আগাম শিম চাষ করলে বিঘা প্রতি ১৫-২০ মণ শিম পাওয়া যায়।
- শীতের আগাম সময়ে শিমের চাহিদা বেশি থাকায় বাজারে এর ভালো দাম পাওয়া যায়।
- বাজারে ভালো দামের জন্য শিমের মান এবং সঠিক সময়ে বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে।
সঠিক পরিচর্যা এবং সময়মত ফসল তোলা হলে বিঘা প্রতি ২ লক্ষ টাকার বেশি লাভ সম্ভব।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url