মিশরীয় ডুমুর গাছের কলম পদ্ধতি এবং ত্বীন ফল চাষ পদ্ধতি ।

 

মিশরীয় ডুমুর গাছের কলম পদ্ধতি এবং ত্বীন ফল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. মিশরীয় ডুমুর গাছের পরিচিতি:

ডুমুর গাছ, যা ত্বীন গাছ নামেও পরিচিত, একটি জনপ্রিয় ফলদায়ক গাছ। ত্বীন গাছের ফল পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং মিষ্টি স্বাদের জন্য সুপরিচিত। এটি প্রধানত মিশর, তুরস্ক, গ্রিস এবং মধ্যপ্রাচ্যে প্রচুর পরিমাণে জন্মায়, তবে এখন বাংলাদেশেও এর চাষ করা হচ্ছে।

২. কলম পদ্ধতি:

কলম পদ্ধতি ত্বীন গাছের বংশবৃদ্ধির একটি কার্যকর পদ্ধতি। সাধারণত গাছের একটি ডাল কেটে মাটিতে লাগানোর মাধ্যমে নতুন গাছ তৈরি করা হয়। কলম পদ্ধতির ধাপগুলো হলো:

অথবা ডালের চারপাশ ১ এনচি পরিমিন ভালভাবে চেচে নিন এবং সেই যায়গায় মাটি লাগিয়ে

ভালভাবে পলিথিন দিয়ে বেধে রাখুন ১৫ দিন।

ধাপ ১: ডাল সংগ্রহ

  • সুস্থ এবং পরিপক্ব ডুমুর গাছ থেকে ৮-১২ ইঞ্চি লম্বা একটি শক্তিশালী ডাল কাটুন।
  • ডালের নিচের অংশটি কাটা হওয়া উচিত যেখানে ৪-৫টি চোখ থাকে।

ধাপ ২: মাটি প্রস্তুত

  • কলম লাগানোর জন্য সঠিক মাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেলে দো-আঁশ মাটি ত্বীন গাছের জন্য আদর্শ।
  • মাটির সাথে জৈব সার মিশিয়ে নিতে পারেন, যা নতুন শিকড় গজাতে সাহায্য করবে।

ধাপ ৩: ডাল লাগানো

  • একটি পাত্রে বা মাঠে ৬-৮ ইঞ্চি গভীর গর্ত তৈরি করুন এবং সেই গর্তে ডালটিকে রোপণ করুন।
  • ডালের চোখগুলো যেন মাটির উপরে থাকে এবং নিচের অংশটা যেন মাটির নিচে থাকে।
  • এরপর ডালের চারপাশে মাটি আলতো করে চেপে দিন এবং পানি দিন।

ধাপ ৪: যত্ন ও সেচ

  • নিয়মিত সেচ দিতে হবে, তবে পানি যাতে জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • ডুমুর গাছের শিকড় দ্রুত বাড়তে শুরু করবে এবং ২-৩ মাসের মধ্যে নতুন কুঁড়ি গজাবে।

৩. ত্বীন ফল চাষ পদ্ধতি:

ক. মাটির প্রস্তুতি:

ত্বীন গাছ চাষের জন্য উঁচু ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো এমন জমি বেছে নেওয়া উচিত। বেলে-দোআঁশ মাটি এই গাছের জন্য আদর্শ। জমি চাষের আগে গোবর বা জৈব সার মাটির সাথে মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করা যেতে পারে।

খ. জলবায়ু ও আবহাওয়া:

  • ত্বীন গাছ সাধারণত উষ্ণ জলবায়ুতে ভালো জন্মে। তবে মৃদু শীতকালে গাছটির বৃদ্ধি ধীর হতে পারে।
  • সঠিক রোদ ও পর্যাপ্ত আলো পাওয়া ত্বীন ফলের চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি দিন ৬-৮ ঘণ্টা সরাসরি রোদ দরকার হয়।

গ. চারা রোপণ:

  • চারা রোপণের জন্য সঠিক সময় হলো বসন্তকাল। এসময় গাছটি দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
  • চারা রোপণের সময় গাছগুলোর মধ্যে ৫-৬ ফুট দূরত্ব রাখা উচিত যাতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় এবং পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে।

ঘ. সার প্রয়োগ:

  • ত্বীন গাছের জন্য জৈব সার সবচেয়ে উপযোগী। বছরে দুইবার গাছের গোড়ায় জৈব সার প্রয়োগ করা উচিত।
  • প্রথমবার বর্ষার আগে এবং দ্বিতীয়বার বর্ষার পরে সার প্রয়োগ করলে গাছের ফলন ভালো হবে।

ঙ. পানি সেচ:

  • ত্বীন গাছের শিকড় মাটির গভীরে পৌঁছাতে সক্ষম, তাই বারবার পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে শুষ্ক মৌসুমে নিয়মিত সেচ দিতে হবে।

চ. পরিচর্যা ও রোগবালাই দমন:

  • পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষা করতে জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • ছত্রাকজনিত রোগ প্রতিরোধে গাছের নিচের পাতা পরিষ্কার রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

৪. ফল সংগ্রহ:

ত্বীন ফল সাধারণত ৩-৪ বছরের মধ্যে গাছে ধরে। ফল পাকলে রঙ পরিবর্তন হয়ে গাঢ় সবুজ বা বেগুনি হয়ে যায়। এই সময় ফল সংগ্রহ করতে হবে। ফল সংগ্রহের জন্য সরাসরি ডাল থেকে মুচড়ে ফল তুলে নেওয়া হয়।

৫. অতিরিক্ত যত্ন:

ত্বীন গাছের ডাল নিয়মিত ছাঁটাই করতে হবে যাতে গাছের শাখাগুলো সুগঠিত হয় এবং ভালো ফলন হয়।

সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে মিশরীয় ডুমুর গাছের ফলন বেশ ভালো হতে পারে এবং এটি বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url