হিংসুকের হিংসা থেকে বাঁচার দোয়া শিখে নিন ।

 

হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তিন ধরনের ব্যক্তির গুনাহ মাফ হয় না, তাদের মধ্যে একজন হলেন যিনি অন্যের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেন।’ হিংসা ও বিদ্বেষের কঠিন পরিণতি সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার মানুষের আমলগুলো আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়, এবং সব মুমিন বান্দার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়; তবে যাদের মধ্যে বিদ্বেষ ও দুশমনি রয়েছে, তাদের গুনাহ মাফ করা হয় না।’ (মুসলিম শরিফ)।

ইসলাম আমাদেরকে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করে। সৃষ্টির সেবা ও জনকল্যাণের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠাই ইসলামের মূল শিক্ষা। নিজের যা আছে, তাতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত। অন্যের দিকে তাকিয়ে বিদ্বেষ পোষণ করে নিজের ক্ষতি করা ছাড়া আর কোনো লাভ নেই। অন্যের সুখ, শান্তি বা ধনসম্পদ ধ্বংস করে নিজে তা পাওয়ার বাসনা, যাকে আরবিতে "হাসাদ" বা হিংসা বলা হয়, ইসলাম এটিকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে।

সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত, আয়াতুল কুরসি:

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

আয়াতুল কুরসি:
"আল্লাহ! তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী। তাঁকে তন্দ্রা বা নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, তা সবই তাঁর। তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করার কেউ নেই। তিনি জানেন যা কিছু তাদের সম্মুখে এবং যা কিছু তাদের পশ্চাতে রয়েছে। আর তাঁর জ্ঞানের বাইরে কেউ কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন, ততটুকুই ব্যতীত। তাঁর কুরসি (ক্ষমতার আসন) আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী পরিব্যাপ্ত করে আছে, আর তিনি এগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করতে ক্লান্ত হন না। তিনি মহীয়ান, মহান।"
(সুরা বাকারাহ, আয়াত: ২৫৫)

সুরা নাস (সূরা ১১৪):

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

অর্থ:
"বলুন, আমি আশ্রয় নিচ্ছি মানুষের প্রতিপালকের,
মানুষের রাজাধিরাজের,
মানুষের উপাস্যের,
তার কুমন্ত্রণার অমঙ্গল থেকে,
যে সুযোগমতো আসে এবং সরে যায়,
যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে,
জিনের মধ্যে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।"
(সুরা নাস, সরল বঙ্গানুবাদ, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন)

এই আয়াতগুলো মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং নানান বিপদ ও শয়তানের কুমন্ত্রণার থেকে রক্ষার জন্য প্রতিদিনের জীবনে পাঠ করা হয়।

সুরা লোকমানের উপদেশগুলো আমাদের জীবনধারা বদলে দিতে পারে:

সুরা লোকমান কোরআনের একটি বিশেষ সুরা, যেখানে হযরত লোকমান (আ.) তাঁর পুত্রকে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছেন, যা একজন মুসলিমের জীবনে দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করতে পারে। এসব উপদেশ আমাদের নৈতিকতা, আচরণ এবং দৈনন্দিন জীবনে চলার পথের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। উপদেশগুলো হলো:

  1. আল্লাহর প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস স্থাপন করা।
  2. শিরক থেকে বিরত থাকা। (আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা সবচেয়ে বড় পাপ)
  3. মাতা-পিতার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা।
  4. নামাজ কায়েম করা।
  5. সৎ কাজের আদেশ এবং অন্যায় থেকে বিরত থাকার উপদেশ দেওয়া।
  6. ধৈর্য ধারণ করা।
  7. অহংকার ও গর্ব করা থেকে বিরত থাকা।
  8. দীর্ঘকালের পরিকল্পনা না করে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা।

সুরা ফালাক (সূরা ১১৩):

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

অর্থ:
"বলুন, আমি আশ্রয় নিচ্ছি উষার স্রষ্টার,
তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অমঙ্গল থেকে,
অমঙ্গল থেকে রাত্রির, যখন তা গভীর অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়,
অমঙ্গল থেকে সেসব নারীর, যারা গিটে ফুঁ দিয়ে জাদু করে,
এবং অমঙ্গল থেকে হিংসুকের, যখন সে হিংসা করে।"

(সুরা ফালাক, সরল বঙ্গানুবাদ, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন)

সুরা লোকমানের উপদেশ এবং সুরা ফালাকের দোয়া, দুটোই আমাদের জীবনের নানা বিপদ ও পরীক্ষার সময়ে পথ দেখায়, এবং সঠিক পথে পরিচালিত করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url