পড়াশোনা কে আবিষ্কার করেন এবং কিভাবে এলো পড়াশোনা:

 


পড়াশোনা কে আবিষ্কার করেন এবং কিভাবে এলো পড়াশোনা: জেনে নিন

পড়াশোনার ধারণা মানুষের ইতিহাসে প্রাচীনকাল থেকে বিদ্যমান, কিন্তু এটি কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা একক সময়ে আবিষ্কৃত হয়নি। বরং, এটি ধীরে ধীরে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামাজিক উন্নতির সাথে গড়ে উঠেছে। প্রাচীন সভ্যতাগুলোতে জ্ঞান অর্জন ও শিক্ষা পদ্ধতি ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করেছে।

প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থা:

১. মেসোপটেমিয়া ও মিশরীয় সভ্যতা:

  • প্রাচীন মেসোপটেমিয়া এবং মিশরীয় সভ্যতাগুলোতে শিক্ষার সূচনা হয়েছিল মূলত ধর্মীয় ও প্রশাসনিক কাজে ব্যবহৃত হতো। এই সময়ের মানুষ শাসন ব্যবস্থায় এবং ব্যবসায়িক লেনদেনে কাজ করার জন্য লিখতে ও গণনা করতে শিখেছিল।
  • সুমেরীয় সভ্যতা (খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০): এখানে মানুষ প্রথমে লিখিত চিহ্ন ব্যবহার করেছিল। তারা কিউনিফর্ম নামক লিখনপদ্ধতি উদ্ভাবন করে, যা পড়াশোনার এক প্রথমধাপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

২. প্রাচীন গ্রীস ও রোম:

  • গ্রীসে দার্শনিকেরা যেমন সক্রেটিস, প্লেটো, এবং অ্যারিস্টটল জ্ঞান অর্জন ও বিতরণের পদ্ধতি গড়ে তোলার জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
  • অ্যারিস্টটল তার শিক্ষাদানের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও দর্শনের বিভিন্ন শাখায় জ্ঞান প্রসারের উদ্যোগ নেন। তাদের চিন্তাধারা প্রাচীন বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থা গঠনে বিশাল ভূমিকা রেখেছে।

৩. ভারতীয় সভ্যতা:

  • প্রাচীন ভারতে গুরু-শিষ্য পরম্পরা বিদ্যমান ছিল। বিদ্যা অর্জন করতে শিষ্যরা গুরুদের নিকট শিক্ষা গ্রহণ করত। বেদ, উপনিষদ, এবং অন্যান্য প্রাচীন গ্রন্থ অধ্যয়ন করা শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।
  • নালন্দা ও তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রাচীন শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে ওঠে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সংগঠিত শিক্ষা ব্যবস্থার সূচনা করেছিল।

শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ:

প্রথমদিকে, শিক্ষা পদ্ধতি মৌখিক ছিল এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে ধীরে ধীরে শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ শুরু হয়। বিভিন্ন সভ্যতায় প্রথম স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার কাঠামো তৈরি হয় এবং মানুষ নিয়মিতভাবে পড়াশোনার সুযোগ পেতে শুরু করে।

আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্ভব:

  • মধ্যযুগপুনর্জাগরণ কালে ইউরোপে শিক্ষার পুনর্জাগরণ ঘটে। বই মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের পর (যেমন জোহানেস গুটেনবার্গের প্রিন্টিং প্রেস), জ্ঞান প্রচারের গতি ত্বরান্বিত হয়।
  • ১৮ ও ১৯ শতকে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা আরও প্রসার লাভ করে এবং সরকার কর্তৃক বাধ্যতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হয়। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গড়ে ওঠে এবং শিক্ষার গুরুত্ব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

উপসংহার:

পড়াশোনা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির আবিষ্কার নয়, বরং এটি মানবসভ্যতার বিকাশের একটি ফলাফল। সভ্যতা যত উন্নত হয়েছে, ততই পড়াশোনা ও শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। ফলে, আজকের দিনে আমরা যে শিক্ষাব্যবস্থার সাথে পরিচিত তা দীর্ঘ ইতিহাসের ফলাফল।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url